বাসায় আটকা পড়ছি। কি কারনে সেটা বলব না। কিন্তু যেহেতু আটকা পড়ছি তাই ভাবলাম সময়টা কাজে লাগাই। হঠাৎ মনে হইল ইনকাম ট্যাক্স নিয়া কিছু লিখি।
২০২৩ এ যে নতুন বাজেট দিল সেটা নিয়ে সোশাল মিডিয়ার হাউকাউ দেখে মনে হইল এ নিয়ে কিছু নিজের চিন্তা ভাবনা লিখি। বেশি হাউকাউ কেন সবাইকে ২,০০০ টাকা ট্যাক্স দিতে হবে সেটা নিয়ে।
খোজ নিয়ে দেখলাম ঘটনা সেরকম না। যাদের টিন সার্টিফিকেট আছে শুধু তাদেরকে যদি সরকারি ৩৮ টা সেবা নিতে হয় তবেই এই কর দিতে হবে।
এ কর এই কঠিন সময়ে ধার্য্য না করলেও চলত। আবার এটা নিয়ে এত বেশি হাউকাউটাও জাষ্টিফাইড মনে হইল না।
যে ৩৮ টা সেবার কথা বলা হইছে সেগুলো যদি কেউ নেয়, তারজন্য বছরে ২,০০০ টাকা খুব বেশি না।
আবার বলতেছি, এই ২,০০০ টাকা কর ধার্য্য না করলেও চলত। এখন দেখি কিভাবে….
১. দুষ্ট বাড়িওয়ালাগো ধরেন!
আমি ঢাকায় আছি মোটামুটি ২০ বছর ধরে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটা বাসায় ভাড়া ছিলাম, এহনও আছি। আমার দেখা মতে মোটামুটি সব বাড়িওয়ালার ইনকাম ট্যাক্স ফাকি দেয়।
কিভাবে বলি…
ধরেন কোন বাড়িওয়ালার ইনকাম ট্যাক্স আসল ৮০,০০০ টাকা। কিন্তু সে এটাকে কোন ITP বা ল’ইয়ারের চেম্বারে গিয়ে তাকে হাজার দশেক টাকা দিবে। তখন এ ট্যাক্সটা হয়ে যাবে ২০ থেকে ২৫ হাজার। ITP বা ল’ইয়ার সাব একা দশ হাজার খাবে না, এরমধ্যে অনেকের ভাগও আছে (ঘটনা সত্য)।
অনেক বাড়িওয়ালা ইনকাম ট্যাক্স দেয়ই না ????
শুধুমাত্র ঢাকার সব বাড়িওয়ালাগো কাছ থেকে যদি সরকার আসল ইনকাম ট্যাক্সের ৮০% ও আদায় করতে পারত, এই ২,০০০ টাকা মিনিমাম ট্যাক্স ধার্য্য করা লাগতো না।
২. ইনকাম ওয়ালা লোকজন একটা একটা করে ধরেন
আমি মোটামুটি ভালই ইনকাম ট্যাক্স দেই। গতবার তো লাখের উপর দিছি! কেন একটু ভাব লইলাম ব্যাখ্যা করি…
শুধু আমার পরিচিতি লোকজন বন্ধুবান্ধব অনেকে আছে যাদের ইনকাম আমার চাইতে কয়েকগুন বেশি। এবং এরা ট্যাক্স দেয় না। কয়েকজন দিলেও দেয় মিনিমাম ট্যাক্স।
এই টাইপের লোকের সংখ্যা অনেক বেশি, ফাকিবাজ বাড়িওয়ালাগো চাইতেও।
এনবিআরের লোকজন শুধু এসিরুমে বসে ডিওটি করলে এদের ধরা যাবে না। তাদের জনবলের ৮০% কে এলাকায় এলাকায় হেটে হেটে এ টাইপ ইনকাম ওয়ালা লোক খুজে বের করতে হবে।
বাকি ২০% অফিসে বসে সব ব্যাংক লেনদেন পর্যবেক্ষন করবে। এদেশে আছে কিনা জানি না, আমেরিকায় কোন একাউন্টে দশ হাজার ডলারের (এখন কম বেশি হতে পারে) লেনদেন হলেই সেটার এলার্ট তাদের আইআরএস অফিসে চলে যায়।
একই ভাবে এদেশের কোন ব্যাংক একাউন্টে একটা ডিসেন্ট এমাউন্ট লেনদেন হলেই এলার্ট চলে যাবে এনবিআরের সার্ভিল্যান্স সফটওয়ারে। তারপর সেই একাউন্টের লোককে খুজে বের করে তার কাছ দেখে ট্যাক্স আদায় করতে হবে।
৩. সার্বজনীন ইনকাম ট্যাক্স শিক্ষা চালু করা
হলিউডের একটা সিনেমায় দেখছিলাম একটা প্রেম ভেঙ্গে যাইতে। কারন ছিল ছেলে ট্যাক্স ফাকি দিছিল এবং এটা খুবই খারাপ চোখে দেখা হয় পশ্চিমা সংস্কৃতিতে।
সার্বজনীন ইনকাম ট্যাক্স শিক্ষাটা এদেশে ক্লাস সেভেন বা এইট থেকেই চালু করা উচিত। এবং যে ছাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাশ করবে তার মাথায় যেন ভালমত ঢুকে যায় কেন ইনকাম ট্যাক্স দেয়া উচিত।
তখন কারো মনে হবে না যে সরকার ট্যাক্স নিতেছে জুলুম করে আবার সরকারি কর্তারাও বুঝবেন তাদের বেতনটা আসে কোথা থেকে ????
তবে খালী উপরের দুইটা জিনিস শক্ত করে ফলো করলেই কিন্তু অনেক হাউকাউ এড়ানো যায়। তখন আর ২,০০০ টাকার ট্যাক্স ধার্য্য করে মানুষের গালাগালি শোনা লাগবে না।